LATEST UPDATE

মঙ্গলবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

কোরবানির ঈদ সামনে রেখে রাজধানীর পশুর হাটগুলোর প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে পৌঁছেছে।

দুই মাস আগে গুলশান ও শোলাকিয়ায় ঈদ জামাতের পাশে জঙ্গি হামলার পর এই ঈদে পশুর হাটগুলোতে নেওয়া হচ্ছে বাড়তি নিরাপত্তা।
পুলিশের ‘ওয়াচ টাওয়ার’ থেকে পুরো হাটে নজর রাখার পাশাপাশি পর্যাপ্ত সংখ্যক সিসি ক্যামেরাও বসানো হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
এবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ১৪টি এবং উত্তর সিটি করপোরেশনে নয়টি জায়গায় পশুর হাট বসছে।
মঙ্গলবার খিলক্ষেতের বনরূপা, মেরাদিয়া, দনিয়া, যাত্রাবাড়ী, রহমতগঞ্জ, মহাখালী টিএন্ডটি মাঠ হাট ঘুরে সেখানকার বেশিরভাগ প্রস্তুতিমূলক কাজ শেষ হতে দেখা গেছে।

কোথায় কোন হাট

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন- জিগাতলা হাজারীবাগ মাঠ, রহমতগঞ্জ খেলার মাঠ, মেরাদিয়া বাজার, ধোলাইখাল সাদেক হোসেন খোকা মাঠ, উত্তর শাহজাহানপুর মৈত্রী সংঘের মাঠ, ধূপখোলা ইস্ট অ্যান্ড মাঠ, ব্রাদার্স ইউনিয়ন সংলগ্ন বালুর মাঠ, পোস্তগোলা শ্মশানঘাট সংলগ্ন খালি জায়গা, লালবাগ হাজী দেলোয়ার হোসেন মাঠ ও পাশের খালি জায়গা, কামরাঙ্গীরচর ইসলাম চেয়ারম্যানের বাড়ির সামনের মোড় থেকে দক্ষিণ দিকে বুড়িগঙ্গা নদীর বাধ পর্যন্ত খালি জায়গা, যাত্রাবাড়ী কাঁচাবাজারের ভেতরের জায়গা, কমলাপুর স্টেডিয়ামের পাশের খালি জায়গা, দনিয়া কলেজ মাঠ ও শ্যামপুর বালুর মাঠ।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন- গাবতলী, উত্তরা ১৫ ও ১৬ নম্বর সেক্টরের মাঝের ব্রিজের কাছের খালি জায়গা, খিলক্ষেত বনরূপা আবাসিক এলাকার খালি জায়গা, মিরপুরের ইস্টার্ন হাউজিংয়ের খালি জায়গা, ভাষানটেক বেনারসী পল্লী মাঠ ও খালি জায়গা, মহাখালীর কড়াইল টিএন্ডটি মাঠ, বাড্ডা পশুর হাট, আশিয়ান সিটি হাউজিং পশুর হাট ও ভাটারা সাঈদনগর পশুর হাট।

বিভিন্ন জেলা থেকে ট্রাকে করে গরু এনে এসব হাটে নামাচ্ছেন বিক্রেতারা।
তবে ঈদের পাঁচদিনের আগে হাটে বেচাকেনায় সিটি করপোরেশনের নিষেধাজ্ঞা থাকায় এখনও বিক্রি শুরু হয়নি এসব হাটে। ক্রেতারা এলেও গরু কিনছেন না, দেখেশুনে চলে যাচ্ছেন। হাটগুলোয় ভিড় জমাচ্ছেন উৎসুক লোকজন।

বনরূপা আবাসিক এলাকার কোরবানির হাটের ইজারাদারের প্রতিনিধি সিদ্দিকুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন,  আগামী বৃহস্পতি বা শুক্রবার থেকে বিক্রি শুরু হবে। তার আগে সোমবার রাত থেকে পুরোদমে গরু আসবে।


হাটের প্রস্তুতি নিয়ে তিনি বলেন, গরু বাঁধার বাঁশের খুঁটি বসানো হয়ে গেছে। বিদ্যুৎ সংযোগসহ অন্যান্য কাজ চলছে।
হাটে ক্রেতা-বিক্রেতাদের নিরাপত্তায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন,  “আমরা ৫০ জন আনসার নিয়েছি। এছাড়া আমাদের ৫০০ স্বেচ্ছাসেবক সার্বক্ষণিক হাট তদারক করবে। সিসি ক্যামেরা বসানো হবে ২৫টি। এখনও কাজ চলছে।”

পুলিশের সহযোগিতা পাচ্ছেন বলেও জানান তিনি।
ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় বলছেন, দেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে কোরবানির হাটগুলোয় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেওয়া হবে।
“কেন্দ্রীয় কন্ট্রোলরুম ছাড়াও প্রতিটি হাটে একটি করে কন্ট্রোলরুম থাকবে। সেখানে পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরাও থাকবে। প্রতিটি হাটের ওয়াচ টাওয়ার থেকে সবকিছু পর্যবেক্ষণ করা হবে।”
কেউ মোটা অংকের টাকা বহন করার সময় পুলিশকে জানালে পুলিশ সহায়তা করবে। ‘অজ্ঞান পার্টির’ বিষয়ে বিশেষ টিম কাজ করবে।

 এছাড়া জাল টাকা শনাক্তে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহায়তায় হাটগুলোয় যন্ত্র থাকবে জানিয়ে কৃষ্ণপদ রায় বলেন, “হাটের আশপাশের ব্যাংকগুলোয় সান্ধ্যকালীন ব্যাংকিং সেবা চালু রাখার জন্য আমার অনুরোধ করেছি।”
চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা থেকে ৩৬টি গরু নিয়ে রোববার বনরূপা হাটে এসেছেন আটজনের এক দল ব্যবসায়ী।
এদের একজন মো. তপু রায়হান জানান, গত পাঁচবছর ধরে এই হাটে গরু নিয়ে আসেন তিনি। গত বছর তেমন লাভ না হলেও এবার লাভের আশা করছেন।
“পাঁচ বছর ধইরে এই হাটে আসি। গতবার সমান সমান ছিল। এইবার যদি ইন্ডিয়ান গরু না আইসে তাইলে ভাল ব্যবসা হবি।”

আগেভাগে এলে হাটে গরু রাখার ভালো জায়গা পাওয়া যায় বলে নিজের তিনটি গরু নিয়ে শনিবার হাটে এসেছেন বলে জানান কুষ্টিয়ার রবিউল ইসলাম।
“আগে না আসলি ভালো জাগা পাওন যায় না। এই লাইগ্যা আগে আসিচ্চি।”
তবে হাটের ব্যবস্থাপনায় খুশি নন আরেক ব্যবসায়ী শাহীন মিয়া। এখনও বিদ্যুৎ সংযোগ না দেওয়ায় দুর্ভোগ পোহানোর কথা জানান তিনি।
“আমাগের এই সুবিধেটুকু কইরে না দিলে হইচ্ছে না। ফোন চার্জ দিবার পারিচ্চি না,” বলেন তিনি।

কুষ্টিয়ার মিরপুর থেকে চারটি বিশালাকার গরু নিয়ে হাটে এসেছেন হযরত আলী।
“গরু নিয়ালাম। দাম চাই চাইর লাক টাকা। উপর আল্লা জানে বেচতি পাইরবো কি পাইরবো না।”
এ হাটে গরু দেখতে ভাই-বোনকে সঙ্গে নিয়ে এসেছেন খিলক্ষেতের বাসিন্দা বেসরকারি চাকরে আসিফ ইকবাল।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “হাটে গরু দেখতে এলাম। দরদাম করছি। কিন্তু দাম বেশি চাচ্ছে। হয়তো আরও দু-একদিন গেলে ঠিক হবে। তবে পছন্দ হলে কিনে ফেলব আগেই।”
রহমতগঞ্জ মাঠেরও সব প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে। সেখানেও বিভিন্ন জেলা থেকে গরু নিয়ে এসেছেন বিক্রেতারা। ক্রেতারা না এলেও গরু দেখতে ভিড় করছেন উৎসুকরা।

গত বছর এই হাটে গরু এনে ‘ভালো’ লাভ করেছেন মেহেরপুরের গাংনি উপজেলার শাহারুল ইসলাম।
“গেলবার এই হাটে আইসে খুব ভালা হইসে। দামও ভালা পাইসি। হেই জন্য এই হাটে গরু নিয়ে আসিচ্ছি।”
মেরাদিয়া হাটে ভালো দাম না পেয়ে এবার রহমতগঞ্জ মাঠে এসেছেন কুষ্টিয়ার মিরপুরের মো. মলিন ইসলাম। নিজের গরু পাঁচটি ‘ভালো’ দামে বেচবেন- এই আশা করছেন তিনি।
“সেবার রামপুরায় খুব একটা জিততে পারি নাই। এই কারণে এইখানে আসলাম। সীমান্তে ভারত থেকে তেমন একটা গরু আসছে না। এজন্য বাজার ভালো যাইতে পারে।”
হাটের সময় সড়কে যান চলাচল নির্বিঘ্ন করতে নির্ধারিত জায়গার বাইরে কোথাও কোনো পশু বিক্রি করতে দেয়া হবে না বলে জানান ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলাম।
তিনি বলেন, “আমাদের মোবাইল কোর্ট কাজ করবে। এছাড়া পুলিশ-র‌্যাব তো আছেই। আমরা কাউকে সড়কে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে দেব না।”

 সূত্রঃ BD News24

Share this:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Copyright © 2014 VIGOROUS MEDIA. Designed by NaYeM | Distributed By Gooyaabi Templates