এবার ঈদের ছুটিতে যারা পাহাড়ে, বিশেষ করে বান্দরবানে
আসবেন, তাঁরা শহরের বাইরে গিয়ে জুমঘরে কিছুক্ষণ সময় কাটাতে পারেন। সেখানে
দেখতে পাবেন সবুজ পাহাড়ে সোনালি ধানে ভরে ওঠা জুমখেত। তার পাশেই পেয়ে যাবেন
ছায়াচ্ছন্ন জুমঘর। সেখানে জিরোতে জিরোতে পাকা ধানের ম–ম গন্ধে অন্য রকম
আবেশ তৈরি হবে। শুনতে পাবেন জুমিয়াদের ফসল কাটার রেং গীত (হুই-উ-উ
ধ্বনিযুক্ত জুমচাষিদের ফসল কাটার গান)।
জুমঘরে বসে পাহাড়ের অপূর্ব নিসর্গশোভা দেখতে দেখতে জুমিয়া
জীবন ও জুম সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ মিলবে। বান্দরবানে
ভ্রমণকারীরা চিম্বুক পাহাড়, নীলগিরি, রুমার বগা লেক, কেওক্রাডং, তাজিংডং
পাহাড়ে ও রাইনক্ষ্যং পুকুর, থানচির তিন্দু, রেমাক্রি, ডিম পাহাড়ে বেড়াতে
গেলে এমন জুমঘরের দেখা মিলবে। ওই এলাকাগুলোতেই মূলত জুমচাষি পাহাড়িরা বসবাস
করেন। প্রতিটি জুমখেতে ছোট-বড় একটি জুমঘর থাকে। ওই জুমঘরকে কেন্দ্র করে
জুম চাষের ধান ও অন্যান্য ফসলের বীজ বপন, খেতের পরিচর্যা, ফসল আহরণসহ
সবকিছু করা হয়। এখন জুমখেতের ধান পেকেছে। জুম চাষের এ ভরা মৌসুমে জুমঘরও
জমজমাট হয়ে উঠেছে।
চিম্বুক পাহাড়ের জুমচাষি রেংরাং¤ম্রো বলেন, জুমিয়াদের এখন
ব্যস্ততার সময় এবং একই সঙ্গে আনন্দেরও। নারী-পুরুষ সবাই মিলে সকাল থেকে ধান
কাটেন। দুপুরে খাওয়াদাওয়ার জন্য অথবা বিকেলে জুমঘরে আসেন। জুমচাষ গবেষক
জিরকুং সাহু বম বলেন, বান্দরবানের ১১টি পাহাড়ি জনগোষ্ঠী সবাই জুমচাষি ছিল। এ
জন্য ভাদ্র-আশ্বিনের জুমখেত ও জুমঘর যাওয়ার জন্য গ্রাম-শহর সব পাহাড়িকে
আন্দোলিত করে। বমেরা জুমঘরকে টলাম, মারমারা বহ্কচাং, চাকমারা মৌনোঘর বলে
থাকে।
ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটের সাংস্কৃতিক
কর্মকর্তা চথুইপ্রু মারমা বলেন, জুমঘর পাহাড়ে জুমিয়া ও জুম সংস্কৃতির
ঐতিহ্যের প্রতীক। জুমঘর ছাড়া জুম সংস্কৃতি বোঝা সম্ভব নয়। ভাদ্র-আশ্বিন
মাসে জুমের ধান পাকলে জুমঘরেরও আনন্দ উল্লাস বয়ে যায়। জুমিয়ারা সবাই
আনন্দ-উল্লাসে ধান কাটে। নবান্ন উৎসব পালন করে। কোনো কোনো জুমচাষি কয়েক
মাসের জন্য পরিবার নিয়ে জুমঘরে থাকেন। এ জন্য জুমঘরে কয়েক ঘণ্টা জুমিয়াদের
সঙ্গে কাটাতে পারলে জুম সংস্কৃতি সহজে জানা ও বোঝা সম্ভব হবে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন