যদিও মরগান যে বাংলাদেশ সফরে আসতে চান না, সেটি প্রায় নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল গত বুধবারই। ওল্ড ট্রাফোর্ডে পাকিস্তানের বিপক্ষে শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচের পর সংবাদমাধ্যমকেই দিয়েছিলেন সেই আভাস। ব্রিটিশ দৈনিক টেলিগ্রাফও প্রায় নিশ্চিত করেই লিখে দিয়েছে, ‘মরগান বাংলাদেশে যাচ্ছেন না, তাঁর বদলে নেতৃত্ব দেবেন জস বাটলার।’ তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাতে ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি) পরিচালক অ্যান্ড্রু স্ট্রাউস খেলোয়াড়দের সময় দিয়েছিলেন গতকাল পর্যন্ত। সেই হিসাবে কালই মরগানেরও সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়ার কথা স্ট্রাউসকে। শেষ পর্যন্ত যদি মরগান আগের সিদ্ধান্তেই অটল থাকেন, সেটি তাঁর ক্যারিয়ারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলেই অনুমান ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমের।
কাকতালীয়ভাবে এই বাংলাদেশ সফর দিয়েই ইংলিশ ব্যাটসম্যান হিসেবে মরগানের আলোয় আসা। ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারি-মার্চে বাংলাদেশের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে দুই দলের মধ্যেই সর্বোচ্চ রান (একটা সেঞ্চুরিসহ ৮৯.৫০ গড়ে ১৭৯) ছিল তাঁর। সেই মরগান পরে ইংল্যান্ড দলের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়েছেন, সীমিত ওভারের অধিনায়কত্ব পেয়েছেন। সীমিত ওভারের ক্রিকেটে ইংল্যান্ডের বদলে যাওয়া তাঁরই নেতৃত্বে। আরেকটা বাংলাদেশ সফর কি বাঁক বদলে দেবে তাঁর ক্যারিয়ারের? স্ট্রাউস তো আগেই বলে রেখেছেন, বাংলাদেশ সফরে টেস্ট-ওয়ানডে দুই সংস্করণেই নিয়মিত অধিনায়ককে পেতে চান তাঁরা। হুমকি দিয়ে রেখেছেন, কোনো ক্রিকেটার সফরে না গেলে ভবিষ্যতে দলে জায়গা নিয়ে তাঁকে অনিশ্চয়তায় পড়তে হতে পারে। তাহলে সফর থেকে সরে দাঁড়ানোটা মরগানের জন্য তো বড় ঝুঁকিরই হবে!
১৬ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ সফরের জন্য ইংল্যান্ডের ওয়ানডে দল ঘোষণা করার কথা। ঘোষণার আগে মরগানকে নিয়ে শেষ কথাটা বলা যাচ্ছে না। তবে যেহেতু ব্যাপারটা অনেকটাই অনুমিত হয়ে গেছে, তাই ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমেও এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে মরগানের সমালোচনা। ডেইলি মেইল শিরোনাম করেছে, ‘ইংল্যান্ডের বাংলাদেশ সফর থেকে সরে দাঁড়িয়ে মরগান দেশের প্রতি দায়িত্বে অবহেলা করছেন, ঝুঁকিতে ফেলছেন নিজের ক্যারিয়ার।’
সাবেক অধিনায়ক, ধারাভাষ্যকার ও কলামিস্ট নাসের হুসেইন গার্ডিয়ানকে বলেছেন, মরগান সফরে না গেলে দলে তাঁর কর্তৃত্ব হারাতে পারেন। সাবেক ইংলিশ পেসার ও ক্রিকেট সাংবাদিক ডেরেক প্রিঙ্গল টুইট করেছেন, ‘ভারত সফরে বোমা হামলার স্মৃতির কথা বলে মরগান ইংল্যান্ডের বাংলাদেশ সফর থেকে নিজেকে সরিয়ে নিল। কিন্তু সে তো ভারতে যাওয়া বন্ধ করেনি।’
ডেইলি মেইলই সবচেয়ে কড়া সমালোচনা করেছে মরগানের। প্রয়োজনের সময় মরগান সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে ব্যর্থ হচ্ছেন দাবি করে পত্রিকাটি প্রশ্ন তুলেছে, ‘তরুণ সতীর্থদের যখন তাদের অধিনায়ককে সবচেয়ে বেশি দরকার, অনিশ্চয়তার মধ্যে তারা যখন চাইছিল অধিনায়ক সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে ২৯ সেপ্টেম্বর ঢাকার বিমানে উঠবেন, সেই সময় মরগান এ কাজটা কীভাবে করে? অথচ এই মরগান যখন টানা ২১ ম্যাচ ফিফটি ছাড়া ছিল, তখনো নির্বাচকেরা তাঁর ওপর আস্থা রেখেছেন।’
শুধু এটুকুই নয়, ডেইলি মেইল-এর দৃষ্টিতে ইংল্যান্ডের প্রতি মরগানের আনুগত্যও প্রশ্নবিদ্ধ, ‘দলে সে সবচেয়ে বিচ্ছিন্ন ও আবেগহীন চরিত্র। ইংল্যান্ডের আইরিশ অধিনায়ক যিনি বড় টুর্নামেন্টে ইংল্যান্ডের ম্যাচের আগে দেশের জাতীয় সংগীত গাইতেও অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। এমনকি তাঁর মিডলসেক্স সতীর্থদের সঙ্গেও হৃদ্যতা নেই। আশ্রিত দেশের হয়ে উচ্চাকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য তিনি নিজের দেশকে বাদ দিতেও দ্বিধা করেননি।’
বাংলাদেশ সফরে না যাওয়ার সিদ্ধান্তটিকে এ পর্যন্ত মরগানের ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বিতর্কিত সিদ্ধান্ত বলছে ডেইলি মেইল, ‘এটা এমন একটা সিদ্ধান্ত, যেটা তাঁকে তাড়া করে ফিরতে পারে।’ সূত্র: ডেইলি মেইল, টেলিগ্রাফ।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন